..
যুক্তরাজ্যের ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকার রিপোর্টঃ চট্টগ্রামের একজন স্কুলশিক্ষক বলেছেন “আগে তিনবেলা খেতে পারতাম, এখন দুই বেলাও জুটে না”
চট্টগ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সেহনাজ খান যুক্তরাজ্যের দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার সাংবাদিক আলিশা রহমান সরকারকে বলেছেন যে তিনি তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে আগে তিনবেলা খেতে পারতেন। কিন্তু গত জুলাই মাসে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর যে হারে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে, তাতে বর্তমানে দুই বেলাও খাবার জোটাতে পারছেন না।
আলিশা রহমান সরকার এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার, রাজনীতি এবং সংখ্যালঘুদের ওপর নিয়মিত লেখালেখি করেন। তিনি তাঁর এক প্রতিবেদনের জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এসব সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে লেখা প্রতিবেদনটি ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শিক্ষক সেহনাজ খান প্রথমে ভবিষ্যতের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী ছিলেন।কিন্তু জীবন-যাপনের ব্যয় বৃদ্ধি এবং ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটসহ সার্বিক অবস্থার অবনতিতে তাঁর আশা নিরাশায় পরিণত হচ্ছে।অতন্ত্য হতাশার সুরে তিনি আলিশাকে বলেন, “আমি আগে আমার পুরো পরিবারকে দিনে তিনবার খাবার দিতে পারতাম।কিন্তু চাল এবং অন্যান্য নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ার কারণে বর্তমানে দুই বেলা খাবার যোগার করতেই কষ্ট হচ্ছে”।
চারজনের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সেহনাজ এখন আগের দিনগুলো ফিরে পেতে চান।তিনি বলেন, “আমরা যদি ভালো ভবিষ্যত নাই পাই, তাহলে আগের অবস্থাতেই ফিরে যাওয়া ভালো।
সেহনাজ একা নন। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে অনেক বাংলাদেশি বিশ্বাস করেন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অতীতের ভুলগুলি সংশোধন করার উপর খুব বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। “এগুলি ভুল অগ্রাধিকার,” বলেছেন ঢাকার একজন পোশাক দোকানের মালিক রাজু পোদ্দার। “কেউই নির্মম অতীতকে স্মরণ করতে চায় না, কিন্তু সরকারকে বর্তমান পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ করার উপর মনোযোগ দিতে হবে। অবিরাম প্রতিবাদ-সমাবেশ এবং প্রতিশোধমূলক আক্রমণ বন্ধ করতে হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ বছর বয়সী ছাত্র রফিকুল ইসলাম, যিনি শেখ হাসিনার পতনের জন্য বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন, তিনিও একই রকম হতাশা প্রকাশ করেছেন। ইউনুস প্রশাসনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং ভারতের সাথে উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ছিল।”
রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, “আমরা জানতাম খুব সহসাই একটি অলৌকিক পরিবর্তন হবে না, কিন্তু এই ক’মাসে যেটুকু উন্নতি হওয়া স্বাভাবিক ছিলো, তা’ও হয়নি।” তিনি মনে করেন, ইউনুস প্রশাসনের অস্তিত্বের আইনি ভিত্তি নেই।তাই একটি নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন।তা নাহলে মানুষের হতাশা বাড়বে যা দেশকে বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিতে না-পারা ছাড়াও ইউনুস নতুন নির্বাচনের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং সংখ্যালঘুদের বা আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্যদের রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি। ফলে সহিংসতায় শত শত বাংলাদেশি সংখ্যালঘু এবং সাবেক শাসক দলের সদস্য ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে হাসিনার পতনের পর পাঁচ মাসে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ৮৮টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যা ভারতে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে।
ব্রিসবেনের গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইয়ান হল দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেছেন, “অস্থায়ী সরকার হাসিনার পতনের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য আরও কিছু করতে পারত”।