..
সুইস পত্রিকার প্রতিবেদন :মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি ইউনুসের অনির্বাচিত সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
সুইস পত্রিকা "SonntagsZeitung" (সন্টাগজেইতুং)-এর এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী জামাতে ইসলামী এবং অন্যান্য মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি মোহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার এবং ১৯৭২ সালের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান বাতিল করার লক্ষ্য নিয়ে এখন কাজ করছে। সুইস সাংবাদিক শার্লট জ্যাকেমার্ট তার সাম্প্রতিক নিবন্ধে এই ঘটনাগুলি তুলে ধরেছেন।
শার্লট জ্যাকেমার্ট ২০০৪ সাল থেকে সুইস-জার্মান ভাষার সাপ্তাহিক সংবাদপত্র NZZ am Sonntag-এ কাজ করছেন। তিনি ২০০৪ সালে বাংলাদেশের পত্রিকা দ্য ডেইলি স্টারে একজন ইন্টার্ন ছিলেন। বাংলাদেশ এবং এর চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বিস্তৃত লিখেছেন, যার মধ্যে রয়েছে রানা প্লাজার বিপর্যয়। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং সেখানে তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন লিখেছেন। সেই প্রতিবেদন ৪ জানুয়ারী ২০২৫ সালে জনপ্রিয় সুইস-জার্মান ভাষার সাপ্তাহিক সংবাদপত্র সন্টাগজেইতুং-এ প্রকাশিত হয়েছে। নিচে তারই কিছু অংশের বাংলা অনুবাদ দেয়া হলঃ
বাংলাদেশ একটি অতিথিপরায়ণ দেশ—সবুজ, সজীব, হাসিখুশি এবং আড্ডাবাজ মানুষদের দেশ। কিন্তু আপনি যদি এখন রাজধানী ঢাকার রাস্তায় হাঁটেন, তাহেল বেশিরভাগ সময় বিষণ্ণ মুখ দেখতে পাবেন। মহিলাদের চলাফেরা কমে গেছে এবং বেশিরভাগই বোর্কা পরা। দাঙ্গা ক্রমশ বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ হয়, যা শহরকে স্থবির করে দেয়। দাড়িওয়ালা লোকেরা লাঠি নিয়ে দৌড়ায়, অন্যদের মারধর করে। তারা "মব" নামে পরিচিত।
আগে ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী লীগের অধীনে চরমপন্থী ইসলামিক দল এবং গোষ্ঠীগুলি নিষিদ্ধ ছিল এবং কিছু ক্ষেত্রে এমনকি তাদের বিচারও হয়েছিল। কিন্তু আগস্টের অভ্যুত্থানের পর ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলি সুযোগটি কাজে লাগিয়ে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের সাথে ক্ষমতা দখল করে।
অভ্যুত্থানটি "ছাত্র বিপ্লব" হিসাবে উপস্থাপন করা হলেও ছাত্ররা প্রকৃতপক্ষে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষাধিকারগুলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিল।
এরপর অবৈধ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইউনুসের অধীনে প্রায় পাঁচ মাস ধরে ঢাকায় ক্ষমতায় রয়েছে। এর আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ইসলামপন্থী দলগুলি আবারও রাজনীতি করার অনুমতি পেয়েছে। ইউনুসের "উপদেষ্টাদের বেশিরভাগই তরুণ যাদের হাতে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তাদের লক্ষ্য হল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা এবং ১৯৭২ সালের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান বাতিল করা।
সরকার পরিবর্তনের ফলে ধর্মনিরপেক্ষ এবং উদার বুদ্ধিজীবীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শুধু আওয়ামী লীগের সদস্যরাই নিপীড়িত, গ্রেপ্তার, অভিযুক্ত হচ্ছে না, বরং প্রাক্তন শাসক দলের মতাদর্শের সাথে ঘনিষ্ঠ সবাই নিপীড়ণের শিকার হচ্ছেন। এ বিষয়ে খোলাখুলিভাবে কথা বলার সাহস রাখে এমন মানুষের সংখ্যাও কমে গেছে।
কেন ৮৪ বছর বয়সী নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ইসলামপন্থীদের সাথে হাত মেলালেন? এর উত্তর দিয়েছেন একটি এনজিওর প্রধান, যার নাম নিরাপত্তার জন্য উল্লেখ করা যাবে না। তিনি বলেন, "এর প্রধান কারণ ইউনুস ব্যক্তিগতভাবে এর থেকে উপকৃত। তার প্রথম অফিসিয়াল কাজ ছিল অনেক বিচারককে প্রতিস্থাপন করা। নতুন বিচারকরা তার বিরুদ্ধে অতীতের সমস্ত রায় বাতিল করেছে। ইউনুসকেও আর কর ফাঁকির জন্য বড় জরিমানা দিতে হবে না।" তিনি আরো বলেন: "ইসলামপন্থীদের জন্য ইউনুস একজন নিখুঁত মুখপাত্র। পশ্চিমা দেশগুলি তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হিসাবে অন্যভাবে দেখে,"।এজন্য ইউনুস যতদিন সম্ভব ক্ষমতায় থাকতে এবং নির্বাচন বিলম্বিত করতে পারবেন। "তিনি আসলে যেখানে সবসময় থাকতে চেয়েছিলেন, জাতির প্রধান হিসাবে আজ সেখানেই আছেন।" প্রকৃতপক্ষে, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা কখনও গোপন ছিলো না।
ঢাকা সফরের সময় শার্লট জ্যাকেমার্ট ডেইলি স্টারের কয়েকজন সাংবাদিকের সাথেও দেখা করেছিলেন। যাদের মধ্যে অনেকেই ইউরোপে চাকরির সুযোগ সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন কারণ বাংলাদেশ তাদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। তিনি লিখেছেন: "ডেইলি স্টার"-এর ক্যাফেটেরিয়ায় বেশ কয়েকজন সহকর্মী সাংবাদিকের সঙ্গে আড্ডার সময় অনেকেরই প্রশ্ন: ইউরোপে তাদের জন্য চাকরি আছে কিনা। তারা বলেন, "আমরা এই মুহূর্তে চুপ হয়ে আছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু বলছি না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি কোনও জীবন নয়"। একজন সাংবাদিক তার ফোন বের করে একটি ভিডিও দেখান যেখানে তিনি বিক্ষোভের ভিডিও করার সময় রাস্তায় মব দ্বারা আক্রান্ত হন।
ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম এখনও দেশের সংবিধান দ্বারা নিশ্চিতকৃত সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সুরক্ষার আহ্বান জানাতে সাহস করেন। কিন্তু আনাম প্রকাশ্যে কথা বলতে চান না। কারণ তাঁরই অফিসের সামনে বিক্ষোভকারীরা তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলানোর দাবি জানাচ্ছে। একই দিনে, ইসলামপন্থীরা "প্রথম আলো"-এর অফিসের সামনে একটি গরু জবাই করে উৎসব করে এবং উভয় পত্রিকা বন্ধ করার দাবি জানায়।