প্রথম আলো থেকে নেয়া ইনফো গ্রাফিক
দাভোস-এ ইউনুসঃ কি অবস্থা বাংলাদেশের অর্থনীতির?
- পাঁচটি বড় ঝুঁকিতে বাংলাদেশ।
- অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদের কণ্ঠে হতাশার সুর।
- অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে যতটা মনোযোগ দিচ্ছে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ততটা দিচ্ছে না।
- রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য অনেকগুলো কমিশন করা হলেও অর্থনৈতিক সংস্কারে কোনো দিকনির্দেশনা নেই।
- অর্থনীতির ক্ষেত্রে এ সরকার আগের সরকারের মতোই কাজ করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রণীত বাজেটেই পরিচালিত হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
- ব্যবসায়ীদের বক্তব্য-৩৪ বছরের মধ্যে এখন ব্যবসায়ীদের জন্য সবচেয়ে দুঃসময়।
- জনগণের প্রশ্ন- জুলাই-আগস্টে কেন এত মানুষ জীবন দিলেন? বৈষম্যবিরোধী স্লোগান সামনে রেখে অভ্যুত্থান হলেও অর্থনৈতিক বৈষম্য রোধে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কেন?
বাংলাদেশের অনির্বাচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে যোগ দিতে বর্তমানে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে রয়েছেন। সেখানে তিনি ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের
কয়েকটি দেশের সরকারের প্রধান ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এই বছরের থিম হলো "Collaboration for the Intelligent Age"। ইউনুস যখন এমন একটি বিষয়ের ওপর সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন, তখন বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন অবস্থায় রয়েছে?
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ডেভস সম্মেলন সামনে রেখে গত ১৫ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনে চলতি বছর বাংলাদেশের জন্য পাঁচটি বড় ঝুঁকি চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি মূল্যস্ফীতি।তারপর রয়েছে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া (বন্যা, তাপপ্রবাহ), দূষণ (বায়ু, পানি, মাটি), বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক সুযোগের অভাব এবং অর্থনৈতিক নিম্নমুখিতা (মন্দা, স্থবিরতা)।
এসব ঝুঁকি মোকাবিলা করার জন্য কি ইউনুস ও তার সরকার প্রস্তুত? এর জবাব খুব সহজেই পাওয়া যায় বাংলাদেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, যাদের অনেকেই ইউনুস সরকারের সমর্থক, তাদেরই ভাষ্যে। তারা উদ্বিগ্ন ও হতাশ। ২১ জানুয়ারি ২০২৫ বাংলাদেশের প্রথম আলো পত্রিকার প্রতিবেদনের কিছু অংশঃ
গত শনিবার (১৮ জানুয়ারি ২০২৫) ‘শ্বেতপত্র ও অতঃপর: অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক আলোচনায় অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদেরা কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেননি। সবার কণ্ঠে ছিল হতাশার সুর। তাঁদের অভিযোগ, অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে যতটা মনোযোগ দিচ্ছে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ততটা দিচ্ছে না। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদন জমা হওয়ার দেড় মাস পার হলেও সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকার কিছুই করেনি।
সরকার অবিবেচনাপ্রসূতভাবে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
শ্বেতপত্র প্রকাশ কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য অনেকগুলো কমিশন করলেও অর্থনৈতিক সংস্কারে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। অনেকের মতে, অর্থনীতির ক্ষেত্রে এ সরকার আগের সরকারের মতোই কাজ করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রণীত বাজেটের অধীনই পরিচালিত হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মূল্যস্ফীতির কথা উল্লেখ করে বলেন, পণ্যমূল্যে আগুন বহির্বিশ্বে নিভে গেলেও বাংলাদেশে নেভেনি। না নেভার কারণও আছে। ফায়ার ব্রিগেড দেরিতে এসেছে। এসে আবার পানি ঢালার বদলে তেল ঢেলেছে। পরে দেখা গেল, পাইপেও সমস্যা আছে।
সবচেয়ে উদ্বেগের কথাটি বলেছেন ব্যবসায়ী সৈয়দ নাসিম মনজুর। তিনি বলেন, ‘৩৪ বছর ধরে দেশে ব্যবসা করি। এমন টানাপোড়েন পুরো ব্যবসায়িক সময়ে দেখিনি। এ অবস্থা চলতে থাকলে বিনিয়োগ অন্য দেশে চলে যাবে।’ ৩৪ বছরের মধ্যে যদি এখন ব্যবসায়ীদের জন্য সবচেয়ে দুঃসময় হয়, সুসময়টি কবে আসবে, কারা আনবেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিয়ে যখন রাজনৈতিক দল ও ছাত্রনেতাদের মধ্যে প্রচণ্ড বাহাস হচ্ছে, সর্বদলীয় বৈঠকেও যখন সিদ্ধান্তে আসতে পারছেন না, তখন আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সাধারণ মানুষের অবস্থা কী। খেটে খাওয়া যে মানুষেরা জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন, ৫ আগস্টের পর তাঁরা নিজ নিজ পেশায় ফিরে গেছেন। তাঁদের কেউ আন্দোলনের কৃতিত্ব নেওয়ার কথা ভাবেন না, কিংবা আগামী নির্বাচনে প্রার্থীও হবেন না। কিন্তু এই নামহীন মানুষগুলো একটু স্বস্তি চেয়েছিলেন, যা তাঁরা পাননি; বরং বাজারে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি তাঁদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
জনগণের প্রশ্ন, অর্থনীতির ক্ষেত্রে যদি অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের মতোই কাজ করে থাকে, তাহলে জুলাই-আগস্টে এত বড় গণ-অভ্যুত্থান কেন ঘটল? কেন এত মানুষ জীবন দিলেন? বৈষম্যবিরোধী স্লোগান সামনে রেখে জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান হলেও অর্থনৈতিক বৈষম্য রোধে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।