...
কেন বাংলাদেশকে 'বর্ষসেরা দেশ' হিসেবে মনোনীত করা উদ্দেশ্যমূলক
ইকোনমিস্ট বাংলাদেশকে বর্ষসেরা দেশ হিসেবে বেছে নিয়েছে। মূলত ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানের এই মুখপত্রের দৃষ্টিতে বাংলাদেশে শাসন পরিবর্তন শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও একটি ইতিবাচক উন্নয়ন। কোনো উন্নত দেশের সাথে নয়, বরং পোল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, আর্জেন্টিনা এবং সিরিয়ার মতো দেশের সাথে তুলনা করেই ইকোনমিস্ট এই তথাকথিত বর্ষসেরা দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছে।
বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের প্রশংসা করে লেখা নিবন্ধে ইকোনমিস্ট ‘স্বৈরাচারী’ সরকারের উৎখাতকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ যে দীর্ঘ সময় ধরে সামরিক শাসনের অধীনে ছিল তার কোনো উল্লেখ নেই। খালেদা জিয়ার অধীনে বিএনপি কম স্বৈরাচারী ছিলো না- আজ কম নয়। এ সম্পর্কে ইকোনমিস্ট চুপ। যদিও ইকোনমিস্ট স্বীকার করেছে যে বিএনপি একটি "দুর্নীতিগ্রস্ত" রাজনৈতিক দল।
বাংলাদেশের বর্তমান শক্তিগুলি দেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে আরও ইসলামী করতে নতুন করে লিখতে চায়। ইকোনমিস্ট বর্তমানে "ইসলামী চরমপন্থা"র উত্থানকে বাংলাদেশের জন্য একটি হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছে। কিন্তু রাজনীতির মাঠে সম্প্রতি নতুন করে সক্রিয় হওয়া জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে তাদের কোনো বক্তব্য নেই।
তাহলে ইকোনমিস্টের ভাবনায় থাকা "অ-স্বৈরাচারী" বা সত্যিকারের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলিকে বাংলাদেশের কোথায় তারা দেখতে পাচ্ছে যারা এই দেশটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে তথাকথিত ইতবাচক পরিবর্তনের পর?
পত্রিকাটি আদালত ও বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিশ্তিত করার পরে নির্বাচন করার আহ্বান জানিয়েছে। যখন প্রধান বিচারপতিকে অফিস থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে এবং বিভিন্ন মামলায় নিজেদের পছন্দসই বিচারকদের দিয়ে সুবিদধাজনক রায় ঘোষণা করানো হচ্ছে তখন ইকোনমিস্ট-এর এই পরামর্শ হাস্যকর বলেই মনে হয়। এটি আরো বলেছে যে ইউনুস সরকারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যেন বিরোধী দলগুলো নির্বাচনের জন্য সংগঠিত হওয়ার সময় পায়। কোন বিরোধী দল? বিএনপি-জামাত সবাইতো ইউনুসের সাথেই রয়েছে? আর জোরেশোরে বলা হচ্ছে কোনো অবস্থাতেই আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে না।
আরো অবিশ্বাস্য যে, পত্রিকাটি কোনো তথ্য-উপাত্য না দিয়েই মন্তব্য করেছে যে ইউনুস সরকার আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করেছে এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করেছে। বাংলাদেশের মাটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং দেশে সংখ্যালঘুদের বিশেষ করে হিন্দু সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের বিষয়ে ভারত ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইকোনমিস্ট এসব উপেক্ষা করেছে যা অপসাংবাদিকাত ছাড়া আর কিছুই নয়। এসব বিষয়ের পরিক্ষিতে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশকে বর্ষসেরা দেশ হিসেবে বেছে নেয়ার পিছনে ইকোনমিস্ট-এর বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে।
(লেখকঃ কানওয়াল সিবাল ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব। তিনি তুরস্ক, মিশর, ফ্রান্স ও রাশিয়ায় রাষ্ট্রদূত এবং ওয়াশিংটনে মিশনের উপপ্রধান ছিলেন। লেখাটি ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে এনডিটিভি-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিবন্ধের একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ)