..

বিবিসি বাংলার সাথে ইউনুসের নির্লজ্জ মিথ্যাচার

প্রফেসর ইউনুস গত সোমবার ৩ মার্চ ২০২৫ বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাতকারে তার নির্লজ্জ মিথ্যাচারের আরেক নজীর স্থাপন করেছেন। নিচে সেসব মিথ্যাচারের প্রধান প্রধান নমুনাগুলো তুলে ধরা হলঃ

বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির সাক্ষাতকারের শুরুতে বলেন, সর্বশেষ যখন আপনার সাথে আমার কথা হচ্ছিলো তখন একটা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ছিলেন, আপনি বলছিলেন গ্রেপ্তার আতঙ্কের কথা। কিন্তু ইউনুস সরাসরি অস্বীকার করেন যে তিনি তখন কোনো আতঙ্কে ছিলেন না। বলেন, আমার কাছে কোনো আতঙ্ক ছিল না। একটা সম্ভাবনা ছিল যে আমাকে নিয়ে যাবে। আই ওয়াজ টেকিং ইট ইজি যে নিলে নেবে, আমারতো করার কিছু নাই।

এখন দেখা যাক ইউনুস তার আগের সাক্ষাতকারে কি বলেছিলেন। বিবিসি বাংলা সেই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলো ২ মার্চ ২০২৪ সালে। তখন স্পষ্টত তিনি তার ব্যক্তিগত আতঙ্কই প্রকাশ করেছেন। তার ভাষাতেই দেখা যাক- “ব্যক্তিগত জীবনে সবকিছু তছনছ হয়ে গেছে। আমার স্ত্রী একজন ডিমেনশিয়া রোগী। সে আমাকে ছাড়া কাউকেই চিনতে পারে না। তার দেখাশোনার দায়িত্ব সব আমার। এ অবস্থায় জেলে থাকতে হলে আমার স্ত্রীর কী অবস্থা দাড়াবে?” তিনি আরো বলেন, “আমি কোন প্ল্যান-গ্রোগ্রাম করতে পারছি না। আমি এবং আমার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবার জন্য এক ধরনের অনিশ্চয়তা কাজ করছে”। ইউনুস তার স্ত্রীর অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নিজের ও তার অধীনস্তদের ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার কথা ভেবে দুশ্চিন্তা করেছেন- যা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু সেসব এখন অস্বীকার করা কি মিথ্যাচার নয়?

বিবিসি-র প্রথম প্রশ্নে ইউনুস আরো বলেন “সরকার যখন গঠন হলো, আমার কোনো চিন্তা ছিল না, ভাবনা ছিল না যে আমি হঠাৎ করে একটা সরকারের প্রধান হবো, দায়িত্ব পাবো।” তার এই কথা কি বিশ্বাসযোগ্য যখন তিনি গত সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উৎখাত ছিলো একটি ‘মেটিক্যুলাস প্লান”। এর আগে ও পরে বিভিন্ন মিডিয়াতেও বিস্তারিত প্রকাশ পেয়েছে যে এই প্লানের নেপথ্যে ইউনুস তার দেশি-বিদেশি বন্ধুদের সহায়তায় ছিলেন প্রধান ক্রীড়নক।

পরের প্রশ্নটি ইউনুস ঠিকমত বুঝতে না পেরে বলেন তার সরকার এখনো সংস্কার শুরু করে নি…সংস্কারতো এখনও শুরু করিনি..। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে প্রথম ভাষণে ইউনুস সংস্কার কাজ শুরুর উল্লেখ করেন এবং এই সংস্কার কাজে সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করার মাত্র দুই সপ্তাহ শেষ হলো উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, “কর্মযাত্রার প্রথম পর্যায়ে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে আপনাদের কাছ থেকে যে সমর্থন পাচ্ছি সেজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ”।

গত বছর ৮ অক্টোবর প্রথম আলোকে দেয়া এক সাক্ষাতকারেও ইউনুস সংস্কার নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেছিলেন নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশিই চলবে সংস্কার—" …আমাদের কাছে কাজটা তো পরিষ্কার। কাজটা হলো নির্বাচনের প্রস্তুতি। এই কাজ আমাদের শুরু করে দিতে হবে। কাজেই নির্বাচনের প্রস্তুতির একটা স্টিম চলতে থাকবে। তার সঙ্গে সংস্কারের কাজ। দুটি একসঙ্গে যাবে। এটি কোনো আলাদা জিনিস নয়। একটা শেষ করে আরেকটা ধরব”।

পরবর্তীতে তার সরকারের ১০০ দিন পূর্তিতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে ইউনুস বলেন, “নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, আর থামবে না। কিন্তু যেতে যেতে আমাদের অনেকগুলি কাজ সেরে ফেলতে হবে। এই ট্রেন শেষ স্টেশনে কখন পৌঁছাবে সেটা নির্ভর করবে কত তাড়াতাড়ি আমরা তার জন্য রেল লাইনগুলি বসিয়ে দিতে পারি আর তা হবে রাজনৈতিক দলসমূহের ঐক্যমত্যের মাধ্যমে।” তার আগের ও এই বক্তব্যের সম্মিলিত মানে কি এই নয় যে নির্বাচনের ট্রেনের যাত্রার পাশাপাশি সংস্কারও তিনি শুরু করেছেন। তিনিই বলেছেন “দুটি এক সঙ্গে যাবে”। তাহলে এখন কেনো অস্বীকার করলেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন ইউনুস সংস্কার বিষয়টিকে তার ক্ষমতা ধরে রাখার ও তা দীর্ঘায়িত করার প্রধান ওজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেছেন বলেই এ নিয়ে একেক সময় একেক কথা বলছেন, প্রকৃত সত্য বলছেন না।

এরপর বিবিসি সাংবাদিক দেশের আইনশৃঙ্খলা ও মানবিধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করেন, “আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে কিন্তু অনেক সমালোচনা হচ্ছে। এবং আমি যদি পুলিশের এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পরিসংখ্যান দেখি, অপরাধ কিন্তু বেশ কিছুটা বেড়েছে। তো এটা আপনারা কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না? জবাবে ইউনুস সেসব বিষয় এড়ানোর কৌশল নিয়ে বিদেশে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। কিন্তু বিবিসি-এর সাংবাদিক মীর সাব্বির তাঁর কাছে আবারো দেশের প্রসঙ্গে - আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে জানতে চান। তিনি উল্লেখ করেন “পরিস্থিতির যে অবনতি হয়েছে, অনেকেই বলছেন যে তারা নানা রকম ভয়ে আছেন, আতঙ্কে আছেন – যেহেতু অপরাধটা তারা দেখছেন, রাস্তাঘাটে যেটা হচ্ছে। এটা আপনারা কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না? ছয় মাসে ডাকাতির সংখ্যা ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এটা পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী। সেটা আমি বলছি। হয়তো পরিসংখ্যান বিভিন্ন হতে পারে, কিন্তু এটা আছে এবং হচ্ছে সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এটা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সমস্যাটা কোথায় হচ্ছে?”

ইউনুস সব পরিসংখ্যান অস্বীকার করে বলেন “আমিতো হিসাব নিচ্ছি। অপরাধের পরিমাণ মোটেই বাড়েনি। আগের মতোই হয়েছে”। তার এই বক্তব্যকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে নিন্দা ও সমালোচনা করছেন। কেউ কেউ এমন মন্তব্যও করেছেন যে ইউনুস দেশের নাজেহাল অবস্থা এবং মানুষের দুর্দশা ও শঙ্কা নিয়ে যে মিথ্যাচার করছেন তা নিদারুণ কৌতুক ছাড়া আর কিছুই নয়। আল জাজিরা, যা ইউনুসের সমর্থনে অনেক প্রতিবেদন প্রচার করেছে, তারাও আজ ৪ মার্চ ২০২৫ এক প্রতিবেদনে বলেছে ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে বিগত ছয় মাসে অপরাধ বাংলাদেশে সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে রাজধানীতে ছিনতাই, হামলা ও ধর্ষণের ঘটনা এতটাই বাড়ছে যে যার ফলে পরিবর্তনের জন্য যারা তাদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছিল সেই তরুণরা প্রশ্ন করছে: 'এ সব তারা কেন করেছিল?'

এ পর্যায়ে মীর সাব্বির মব ভায়োলেন্স, ধানমন্ডি ৩২সহ সারাদেশে অনেক ভবনে ভাঙচুর এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিকার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন,অপরাধের পাশাপাশি আরেকটা বিষয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে, যেটাকে মব বা দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা বলা হচ্ছে। যেমন গণপিটুনির একটা বিষয় দেখা গেছে। কিছুদিন আগের কথা যদি বলি, ধানমন্ডি ৩২সহ সারাদেশে অনেক ভবনে ভাঙচুর হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে এগুলো চললেও সরকারের কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন ভূমিকা দেখা যায়নি। তখন কেন তেমন ভূমিকা দেখা গেল না? আপনি পরে এটা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তখন কেন কার্যকর ভূমিকা পালন করেনি? ইউনুস এসবের কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নি। অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে রাজনীতিকদের মধ্যে এবং জনমনে যে সংশয় তৈরি হয়েছে তাও ইউনুস নির্দ্বিধায় অস্বীকার করেন।

সর্বোপরি তিনি আওয়ামী লীগকে “একটা পলাতক দল” হিসেবে অভিহিত করে সেই দল দেশকে অস্থিতিশীল করার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন যার পক্ষে তিনি আজ পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দিতে পারেন নি। এছাড়া আওয়ামী লীগকে পলাতক দল বলা মিথ্যাচার বলেই সাধারণ মানুষ মনে করে।

Share this post: