
..
ভারতের অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আহ্বান আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে
সারসংক্ষেপ:
- ভারত বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে।
- ভারতের বিবৃতি আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রতি সমর্থন বোঝায়।
- রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভারত আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়ার বিরোধিতা করছে।
- আওয়ামী লীগকে বাদ দেয়া হলে আঞ্চলিক পরিস্থিতি আরো অস্থিতিশীল হতে পারে।
- অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আওয়ামী লীগের প্রতি বৈরিতার কারণে আগামী নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
- আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী অভিযান অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন না হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়েছে।
- ইউনুসের সাথে যুক্ত প্রভাবশালী যুব নেতারা রাজনৈতিক সংস্কার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।
- সংবিধান বিশেষজ্ঞরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বিস্তারিত:
ভারত বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে, যা আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেবে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ এই আহ্বান জানান, যেখানে তিনি বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল উন্নয়নের পক্ষে ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং গণতান্ত্রিক উপায়ে সকল ইস্যুর সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বের কথাও উল্লেখ করেছেন, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের এবং তাদের সম্পত্তি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির সুরক্ষা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন।
ভারতের পক্ষ থেকে এই আহ্বান এসেছে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে। গত আগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদচ্যুত হওয়ার পর থেকে দেশটি নানা অস্থিরতায় মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হওয়ায় এর দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও ইউনুস নির্বাচন ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬-এর মধ্যে অনুষ্ঠানের ইঙ্গিত দিয়েছেন, তবে তিনি এখনও একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ দেননি, যা অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়েছে।
আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে ভারতের অবস্থান
ভারতের এই বিবৃতির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে, বিশেষ করে আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের ওপর। দ্য টেলিগ্রাফ-এর রাজনৈতিক বিশ্লেষক দেবদীপ পুরোহিতের মতে, ভারত আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়ার যেকোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পরোক্ষভাবে ইউনুস সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছে। ভারত বিশ্বাস করে শকেহ হাসিন ও তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাদ দেওয়া হলে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা আরও বাড়তে পারে।
পুরোহিত তার “শেখ হাসিনা থ্রাস্ট ইন বাংলাদেশ পোল প্রড: ইন্ডিয়া কলস ফর 'ইনক্লুসিভ' ইলেকশনস” শীর্ষক বিশ্লেষণে হাসিনার রাজনৈতিক প্রান্তিককরণের সম্ভাব্য পরিণতিগুলি তুলে ধরেছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য ভারতের আহ্বান হাসিনার প্রতিই সমর্থন জোরদার করার এবং বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ার চ্যালেঞ্জ
আওয়ামী লীগের প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈরিতা আগামী নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী অভিযান এই ভয়কে আরও তীব্র করেছে যে নির্বাচনটি অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে না। ইউনুসের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তারকারী কিছু যুব নেতা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংস্কারের আহ্বান এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন । এরকম একজন নেতা সারজিস আলম নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে হাসিনাকে "বিচার ও ফাঁসি" দেওয়ার কথা বলেছেন, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও সন্দেহ তৈরি করেছে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার তানিয়া আমির অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আমির যুক্তি দিয়েছেন যে বর্তমান সরকারের সংবিধানগত ম্যান্ডেট নেই এবং এটি অবিলম্বে সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হওয়া উচিত। তিনি জেল থেকে মুক্ত হওয়া দণ্ডপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার এবং গত ছয় মাসে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি থেকে লুট করা অস্ত্র উদ্ধারের জন্য একটি জাতীয় অভিযানেরও আহ্বান জানিয়েছেন।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, বিশেষ করে নারী ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অপরাধ বৃদ্ধি নিয়ে ভারত গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জয়সওয়াল উল্লেখ করেছেন যে ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ২,৩৭৪টি সহিংস মধ্যে ৯৮% "রাজনৈতিক প্রকৃতির" । ভারত বাংলাদেশকে পক্ষপাতহীনভাবে সমস্ত ঘটনা তদন্ত করে এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে।
ইউনুসের দাবি যে তার সরকার ক্ষমতায় আসার পর অপরাধের হার বাড়েনি। অথচ দ্য ডেইলি স্টার-এর এক রিপোর্টে গত ছয় মাসে ডাকাতি ৫০% বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছে। একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন যে প্রকৃত অপরাধের হার আরও বেশি, কারণ প্রতিশোধের ভয়ে অনেক ঘটনাই রিপোর্ট করা হয় না।
উপসংহার
বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য ভারতের আহ্বান অঞ্চলটিতে গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার প্রতি তার প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
সংশ্লিষ্ট ভিডিও দেখতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ